দেখলাম ফারুকীর পিঁপড়াবিদ্য। অসাধারণ কিছু না হলেও ভালোই লেগেছে। অন্তত আর দশটা বাংলা সিনেমা থেকে তো অবশ্যই ভালো। যেই দেশে তারেক মাসুদ নাই, সেই দেশে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করাটাও বোকামি। গত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু বাংলা সিনেমা আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত সুন্দর পোস্টার আর দুই একটা গান ছাড়া কিছু দিতে পারে নি। সেই বিবেচনায় পিঁপড়াবিদ্যা অন্তত বাস্তব জীবনের একটা দিকে আলোকপাত করেতে পেরেছে, কিছুটা চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে।
কাহিনী-সংক্ষেপে গেলাম না। স্পেসিফিক্যালি সিনেমার দুই একটা ভালোলাগা পয়েন্ট বলি।
প্রথমেই কাস্টিং। ফারুকীকে ধন্যবাদ দিতেই হয় তিশাকে মূল চরিত্রে না নেওয়ার জন্য। এমনিতে তিশা খুবই ভালো অভিনেত্রী, ইন ফ্যাক্ট এই “এত্তোগুলো লাক্স সুন্দরীদের” যুগেও তিশাই অল্পকিছু ভালো অভিনেত্রীর মধ্যে একজন। কিন্তু একই অভিনয়শিল্পীকে সব সিনেমায় দেখতে কয়জনের ভালো লাগে?
শিনা চৌহানকে নিয়ে আমি সন্দেহে ছিলাম। বিপিএলে এই মেয়েটাকে দেখেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছিল। কথার মধ্যে অর্ধেকের বেশি ইংলিশ, তার উপর বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন আইডিয়া নাই, পাশের ধারাভাষ্যকার তাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জ্ঞান দিতেই অর্ধেকের বেশি সময় নষ্ট করছিল। কিন্তু আমাকে অবাক করে আশ্চর্য রকম ভালো অভিনয় করেছে শিনা। ইন ফ্যাক্ট এই চরিত্রে এরকম অভিনয় অন্য কেউ করতে পারতো কি না, সন্দেহ হয়। মিঠু চরিত্রে নতুন ছেলেটাও বেশ ভালো অভিনয় করেছে। তার গোবেচারা টাইপ চেহারাও চরিত্রের সাথে পুরাই মানিয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত, ফারুকীর পরিমিতিবোধ। যেই ভিডিওটা নিয়ে মূল কাহিনী, সেই ভিডিওটা স্ক্রীণে না দেখানোটা একটা অসাধারণ সিদ্ধান্ত ছিল। ভিডিওটা দেখালে ফারুকী হয়তো এক শ্রেণীর দর্শক বেশি পেতো, কিন্তু সিনেমাটার মূল সুর কেটে যেত। এবং সিনেমার মূল যেই লক্ষ, মানসিক দ্বন্দ্বগুলো দেখানো, সেটা থেকে গুরুত্ব সরে যেতো। আইটেম সং নিয়ে কিছু বললাম না। কারণ এটা সেই অর্থে কমার্শিয়াল ফিল্ম না। তাই আইটেম সং থাকার প্রশ্নও আসে না।
তৃতীয়ত, গান না ব্যবহার করা। গান উপমহাদেশের সিনেমার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু প্রতিটা সিনামতেই সাত-আটটা করে গান থাকতে হবে – এই সূত্র ফারুকী আগে থেকেই ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। এবারও সেটা অব্যাহত ছিল। সিরিয়াস একটা কাহিনীর মধ্য দিয়ে জাস্ট ফর্মালিটি রক্ষার জন্য একটা গান ঢুকিয়ে দেওয়ার কোন অর্থ হয় না।
চতুর্থত, ফিনিশিংটা উন্মুখ রাখা। এটা ইদানীং অনেক সিনেমাতেই হচ্ছে। দর্শককে ক্লিয়ার কোন ম্যাসেজ না দিয়ে বরং বিবেচনার ভারটা দর্শকের হাতে ছেড়ে দেওয়াটাই ভালো।
সব মিলিয়ে সিনেমাটা উপভোগ্যই। আমার কাছে অবশ্য ফারুকীর টেলিভিশন আরো অনেক বেশি ভালো লেগেছিল। তবে এটাও খারাপ লাগে নি। সিনেমার একটাই সমস্যা, রানটাইম মাত্র দেড় ঘন্টা। দুই বছর পরে একজন পরিচালক যদি একটা সিনেমা বানায়, সেটা আরেকটু বড় করে বানালে ক্ষতিটা কোথায়?
প্রথম লেখা: ৩ জানুয়ারি, ২০১৫, ফেসবুকে