গত প্রায় দেড়-দুই বছর ধরেই সিরত আনসার আশ্শারীয়ার অধীনে ছিল। কিন্তু গত দুই-তিন ধরে সিরত আনঅফিশিয়ালি একেবারে সরাসরি দায়েশ তথা ইসলামিক স্টেটের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। আইএসরা বৃহস্পতিবার সিরতের প্রধান রেডিও স্টেশন দখল করে নিয়েছে। এবং সেখান থেকে নিয়মিত সিরতের মানুষকে সকল অনৈসলামিক কর্মকান্ড পরিহার করে ইসলামিক স্টেটের খলিফা আবুবকর আল বাগদাদীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
রাস্তাঘাটে এখনও আইএস এর কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ধীরে ধীরে সবগুলো ইনস্টিটিউশন তারা দখল করে নিচ্ছে। বুধবার থেকে সিরতের পাসপোর্ট অফিসও (জাওয়াজাত) আইএস এর দখলে। তারা সিরতের ওয়াগাদুগো কনফারেন্স সেন্টারও দখলে নিয়েছে এবং সেখানে একটা ইসলামিক আদালত প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দিয়েছে।
শুক্রবারে সিরতের ইবনে সীনা হসপিটালেরও দখল নিয়েছে আইএস। এবং ইবনে সীনা হসপিটালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মিসরাতা ভিত্তিক সেন্ট্রাল লিবিয়া শীল্ড ব্রিগেডকে রবিবার সকাল পর্যন্ত সময় দিয়েছে সিরত ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। এমনকি তাদের সাথে করে মিসরাতি আহত যোদ্ধাদেরকেও সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
মাত্র কয়েকদিন আগে আইএস সিরতের ট্রাফিকের প্রধানকে হত্যা করেছে এবং হত্যা করা হবে এরকম ট্রাফিক অফিসারদের একটা লিস্ট প্রকাশ করেছে। আর গতকাল শুক্রবার নতুন প্রকাশ হওয়া একটা ভিডিওতে দেখা গেছে সিরতের ২১ জন মিসরীয় খ্রিস্টানকে জবাই করে তাদের লাশের উপর মাথাগুলো সাজিয়ে রেখেছে আইএস এর জঙ্গিরা।
আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা আবার কেমন যেন ছোট হয়ে আসছে। ঠিক ২০১১ সালের মতো। সেবারের মতো এবারেও সম্ভবত শেষ যুদ্ধটা সিরতেই হবে। এবং এটা হবে আগেরবারের চেয়ে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী।
প্রথম লেখা: ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ফেসবুকে
আজকে বিকেলে আইএস এর পঞ্চাশটার মতো গাড়ি পুরো সিরত শহর জুড়ে র্যালি করেছে। সমুদ্রের পাড়ের রাস্তাটা দিয়ে (আট নম্বর ছবিটা, যেটা আমাদের বাসা থেকে তিন-চারশ মিটার দূরে) র্যালিটা যাওয়ার সময় আমাদের বাসা থেকে দেখা যাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু প্যারেডটা যে এই বিশাল আকারের, সেটা তখন বুঝতে পারিনি। এখন তো ছবিগুলো দেখেই মাথা ঘুরছে! আগামী দিনগুলো কাটাবো কিভাবে?
প্যারেড শুরু করার আগে এই গাড়ির বহর সম্ভবত নওফলিয়া থেকে সিরতে এসে সেক্রেটারিয়েট কমপ্লেক্সে (আমানাতে) উঠে। পরে বিকেল বেলায় শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ট্রাফিকের কন্ট্রোল নেয় তারা। এরপরই সন্ধ্যার কিছু আগে এই র্যালি বের করে।
বিকেল থেকে নাকি সেক্রেটারিয়েট কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ভবনের ছাদে ওদের স্নাইপারদের অবস্থানও লক্ষ করা গেছে। পরে রাতের বেলা তারা সিরত ইউভার্সিটির দখল নেয় এবং সেখানের দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ডদেরকে বের করে দেয়।
সম্ভবত এই র্যালির উদ্দেশ্য মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করা, তাদের শক্তি প্রদর্শন করা এবং সরকারী বাহিনীকে তাদের অবস্থান সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া।
প্রথম লেখা: ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ফেসবুকে