গাদ্দাফীনামা

আজ আউয়াল (পহেলা) সেপ্টেম্বর। লিবিয়ান বিপ্লব দিবস। 1969 সালের এই দিনে লিবিয়ান নেতা মোয়াম্মার আল গাদ্দাফী সাবেক আমীর ইদ্রীস আল সেনুসীকে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অপসারণ করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। সেই থেকে গত 39 বছর ধরে তিনি প্রবল পরিক্রমায় দেশ পরিচালনা করে আসছেন। আজ তার ক্ষমতায় আরোহণের 39 তম বার্ষিকী আমার ব্লগে এই প্রবন্ধটা দিলাম।

এর তথ্যগুলোর অধিকাংশই ইন্টারনেট থেকে নেওয়া, কিছু আমার নিজের লিবিয়ায় থাকার অভিজ্ঞতা থেকে লেখা।

মোয়াম্মার আল গাদ্দাফীর পুরো নাম আবু মিনিয়ার আল মোয়াম্মার আল গাদ্দাফী। তাঁর জন্ম 1942 সালে সিরত শহরের এক যাযাবর বেদুইন পরিবারে। অন্যসব লিবিয়ান শিশুর মতো তিনিও শৈশবে ঐতিহ্যগত ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি 1956 সাল থেকে 1961 সাল পর্যন্ত ফেজান এর সাবহা প্রিপারেটরি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। সেখানে অধ্যয়ন কালে তিনি এবং তাঁর কতিপয় বন্ধু সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার শাসন ক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তাঁর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই 1961 সালে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয়তার অভিযোগে তাঁকে সাবহা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

সাবহা থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তিনি বেনগাজীর তত্‍কালীন ইউনিভার্সিটি অব লিবিয়াতে (পরবর্তীতে যেটা বেনগাজীর আল ক্বারিউনেস এবং ত্রিপলীর আল ফাতাহ এই দুই ইউনিভার্সিটিতে বিভক্ত হয়ে যায়) ভর্তি হন এবং উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। এরপর 1963 সালে তিনি বেনগাজীর সামরিক পরিষদে যোগদান করেন। সেখানে তিনি এবং তার অনুগত কতিপয় সামরিক কর্মকর্তা লিবিয়ার পশ্চিমমুখী রাজতন্ত্রকে (সেনুসী রাজতন্ত্র) উৎখাত করার জন্য একটি গোপন দল গঠন করেন। 1965 সালে তিনি উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য ব্রিটেনে যান এবং 1966 সালে কমিশন প্রাপ্ত অফিসার পদে উন্নীত হয়ে লিবিয়ায় ফিরে আসেন।

1969 সালের পহেলা সেপ্টেম্বরে, যখন তৎকালীন রাজা মোঃ ইদ্রীস আল সেনুসী তার শারীরিক অসুস্থার জন্য তুরস্কে সফরে গিয়েছিলেন, তখন মাত্র 27 বছর বয়সী কর্ণেল মোয়াম্মার আল গাদ্দাফী তার অল্প কয়েকজন সামরিক অফিসারের সহায়তায় রাজধানী ত্রিপলীতে এক প্রতিরোধহীন এবং রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার শাসন ক্ষমতা দখল করেন। গাদ্দাফীর এ সকল কাজে তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিলেন গাদ্দাফীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিসরের তত্‍কালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের। নাসেরের মৃত্যুদিবস এখনও লিবিয়াতে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।

এর অল্প পরেই তার এবং তার অল্প বয়সী সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র অফিসারদের এবং কিছু প্রভাবশালী বেসামরিক নাগরিকের সাথে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ সকল দ্বন্দ্ব নিরসন করে 1970 সালের জানুয়ারি মাসে গাদ্দাফী একজন সফল শাসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সাবেক রাজা আমীর ইদ্রীস আল সেনুসীকে তুরস্ক থেকে মিসরে নির্বাসন দেওয়া হয়। তিনি 1983 সালে নির্বাসিত অবস্থায় মিসরে মৃত্যুবরণ করেন।

মোয়াম্মার আল গাদ্দাফীর সন্তান-সন্ততি আট জন। এদের মধ্যে সাতজন ছেলে এবং একজন মেয়ে। তার আরেকটি মেয়ে 1986 সালে তার বাড়িতে মার্কিন বিমান হামলায় মৃত্যুবরণ করে। গাদ্দাফীর বড় ছেলে মোহাম্মাদ গাদ্দাফী লিবিয়ান অলিম্পিক কমিটি এবং তাঁর দ্বিতীয় ছেলে সা’দ গাদ্দাফী লিবিয়ান ফুটবল ফেডারেশন পরিচালনা করছেন। সা’দ নিজেও একজন বেশ ভালো ফুটবলার এবং তিনি লিবিয়ার জাতীয় দলে খেলেন। তাঁর তৃতীয় পুত্র সাইফ আল ইসলাম একজন চিত্রশিল্পী এবং একটি চিকিৎসালয় এর পরিচালক। তাঁর একমাত্র কন্যা আয়েশা গাদ্দাফী একজন আইনজীবী এবং তিনি ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেইনের পক্ষে আইনী লড়াই করে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন। এছাড়া দেশের ভেতরে শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক কাজে তিনি আত্মনিবেদিত। তার অপর তিন ছেলে আল মুতাস্সীম, হানওয়ীল এবং খামীস এখনও অখ্যাত। সম্প্রতি 2004 সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর ষষ্ঠ পুত্র হানওয়ীল প্যারিসে পুলিশি ধাওয়ার শিকার হন।

গত এক দশক আগেও মোয়াম্মার আল গাদ্দাফীর সাথে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ছিল রীতিমত সাপে-নেউলে। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর মধ্যে নীতিগত ভাবে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। 2001 সালের 11ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর তিনিই প্রথম এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানান। 2002 সালে তিনি 1988 সালে স্কটল্যান্ডের লকারবির আকাশে মার্কিন বিমানের উপর বোমা বিস্ফোরণের জন্য প্রকাশ্যে জনগণের কাছে ক্ষমা চান এবং এর জন্য বিপুল অংকের ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন। 2003 সালে মার্কিনীদের হাতে সাদ্দাম হুসেইনের পতনের পর তিনি স্বেচ্ছায় তাঁর সকল গণ বিধ্বংসী অস্ত্র কর্মসূচী বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন।

মোয়াম্মার আল গাদ্দাফী রচিত অমর গ্রন্থ হল কিতাবিল আখদার বা দ্যা গ্রীন বুক বা সবুজ গ্রন্থ। এটি 1976 সালে প্রকাশিত হয়। তিন খন্ডে প্রকাশিত এই গ্রন্থে সমাজ এবং রাষ্ট্র সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধানে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত হয়েছে। এটিই মূলত লিবিয়ার সংবিধান।

ইংরেজিতে মোয়াম্মার আল গাদ্দফীর নামের বানান নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। 2004 সালের মার্চ মাসে London Evening Standard পত্রিকায় তাঁর নামের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে সম্ভাব্য 37 টি বানানের কথা উল্লেখ করা হয়।

One thought on “গাদ্দাফীনামা”

  1. What a Pumpkin Story !!!!!!!

    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ——————/´ ¯/)
    —————–/—-/
    —————-/—-/
    ———–/´¯/’–‘/´¯`•_
    ———-/’/–/—-/—–/¨¯\
    ——–(‘(———- ¯~/’–‘)
    ———\————-‘—–/
    ———-‘\’————_-•´
    ————\———–( If you hate me..
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান