Tag Archives: বিদ্রোহ

ম্যারি কোলভিনের প্রাইভেট ওয়ার


ফিচার ইমেজে গাদ্দাফীর সাথে ম্যারি কোলভিনের যে দৃশ্যটা দেখা যাচ্ছে, সেটা বাস্তবের না, A Private War সিনেমার। তবে বাস্তবেও সানডে টাইমসের সাংবাদিক ম্যারি কোলভিন গাদ্দাফীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। একবার না, একাধিক বার।

১৯৮৬ সালে রিগ্যান প্রশাসন যখন লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাসভবনের উপর বিমান হামলা (অপারেশন এল-ডোরাডো ক্যানিয়ন) পরিচালনা করে, তখন ম্যারি কোলভিনই ছিলেন প্রথম সাংবাদিক, যিনি গাদ্দাফির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।

বাস্তবে গাদ্দাফীর সাথে ম্যারি কোলভিন; Image Source: BBC

পরবর্তীতে ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পরেও গাদ্দাফির প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। ইনফ্যাক্ট গাদ্দাফী প্রশাসন ম্যারি কোলভিনের রিকোয়েস্টে সাড়া দিয়ে মোট তিনজন সাংবাদিককে গাদ্দাফীর সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেয়। বাকি দুইজন সাংবাদিক কারা হবেন, সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তারা ম্যারির উপরেই ছেড়ে দেয়।

Continue reading ম্যারি কোলভিনের প্রাইভেট ওয়ার

১৭ই ফেব্রুয়ারির বিপ্লব: গাদ্দাফীর পতনের জানা-অজানা ‌অধ‍্যায়


২০১১ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি। আরব বসন্তের ধারাবাহিকতায় সেদিন লিবিয়াতেও শুরু হয়েছিল গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে আন্দোলন, যার ধারাবাহিকতায় আট মাস পর পতন ঘটে বেয়াল্লিশ ধরে ক্ষমতায় থাকা লৌহ মানব মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফীর। কিন্তু ঠিক কী কারণে, কীভাবে শুরু হয়েছিল এ বিদ্রোহ? আর ঠিক কীভাবেই পতন হয়েছিল গাদ্দাফীর? সেই ইতিহাসই তুলে ধরলাম এ লেখায়। লেখাটি মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

Continue reading ১৭ই ফেব্রুয়ারির বিপ্লব: গাদ্দাফীর পতনের জানা-অজানা ‌অধ‍্যায়

‘লিবিয়ার শতবর্ষের নির্জনতা’ : মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার সাক্ষাৎকার


ইরফানুর রহমান রাফিন একজন জনপ্রিয় ব্লগার। সম্প্রতি তিনি নিজের ব্লগে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎ প্রকাশ করা শুরু করেছেন। প্রথম সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জনপ্রিয় রাজনৈতিক সমালোচক অনুপম দেবাশীষ রয়ের। আর দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারটি ছিল আমার।

এই সাক্ষাৎকারে লিবিয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, গাদ্দাফীর উত্থান, তার শাসণামলের ভালোমন্দ দিকগুলো, ২০১১ সালের বিদ্রোহের সূচনা, দেশী-বিদেশী শক্তির প্রভাব, বিদ্রোহ পরবর্তী লিবিয়ার রাজনীতি, আল-ক্বায়েদা-আইসিসের উত্থান, তাদের ক্ষমতার উৎস, লিবিয়ার ভবিষ্যৎ সহ অনেক কিছু উঠে এসেছে।

মূল সাক্ষাৎকারটি পড়তে পারেন এই লিংক থেকে

Continue reading ‘লিবিয়ার শতবর্ষের নির্জনতা’ : মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার সাক্ষাৎকার

গাদ্দাফীর অধীনে আমাদের শেষ রোযা এবং শেষ ঈদের স্মৃতি


ঈদ এক বছর পরপরই আসে। বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে একটা ঈদ আসে দুই মাস পরে,আরেকটা আসে দশমাস পরে। কিন্তু আমাদের জন্য এবার ঈদ এসেছে দুই বছর পরে। কারণ গত বছরের কোন ঈদই আমরা ঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। রোযার ঈদের সময় আমরা ছিলাম চারদিকে বিদ্রোহী সৈন্যদের দ্বারা অবরুদ্ধ শহরে। আর কুরবানীর ঈদের সময় ছিলাম মাত্র যুদ্ধ কাটিয়ে উঠা বিদ্ধস্ত শহরে। জীবনে প্রথমবারের মতো কুরবানী ছাড়াই ঈদ উদযাপন করতে বাধ্য হয়েছিলাম আমরা।

Continue reading গাদ্দাফীর অধীনে আমাদের শেষ রোযা এবং শেষ ঈদের স্মৃতি

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৮ম পর্ব): প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন


২২ শে অক্টোবর, শনিবার। সকাল দশটার দিকে আমরা খামসিন থেকে বের হয়ে সিরতের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। সাথে প্রচুর পরিমাণ খাবার-দাবার। যাচ্ছি একটা ট্রাকের পেছনে চড়ে। খামসিনের চেক পয়েন্ট থেকে বিদ্রোহীরা এই ট্রাকওয়ালাকে রিকোয়েস্ট করে আমাদেরকে উঠিয়ে দিয়েছে। রাস্তা দিয়ে ফেরার সময় দেখলাম যুদ্ধের গাড়ি তেমন নেই, কিন্তু সাধারণ পিকআপে আর ট্রাকে করে মানুষ দামী দামী গাড়ি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন সহ দামী দামী জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বিভিন্ন দোকানপাট এবং বড়লোকদের বাড়ি থেকে লুটপাট করা জিনিস এগুলো।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৮ম পর্ব): প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৭ম পর্ব): বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে


উদ্ধার হওয়ার পর আমাদেরকে বেশিক্ষণ রাস্তায় অপেক্ষা করতে হল না। সেই দাড়ি-টুপি এবং চশমা ওয়ালা বৃদ্ধ আমাদেরকে এক যোদ্ধার গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজে পেছন পেছন আসতে লাগল। সেই যোদ্ধা গাড়িতে উঠেই প্রথমে আমাদেরকে বলল, গুল গাদ্দাফী ক্যাল্‌ব। অর্থাৎ, বল গাদ্দাফী কুত্তা। আমরা সবাই-ই সম্মতিসূচক একটা হাসি দিলাম, কিন্তু প্রথমে কেউই উচ্চারণ করলাম না। গাদ্দাফীর এই মুহূর্তের নীতি খারাপ, কিন্তু জন্মের পর থেকে তো তার দেশেই খেয়ে পরে বড় হচ্ছি, এতো সহজে তাকে এভাবে গালি দেই কিভাবে?

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৭ম পর্ব): বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৬ষ্ঠ পর্ব): দ্বিতীয় জীবন


১৫ই অক্টোবর ২০১১

সারাদিন প্রচন্ড যুদ্ধ চলল। সন্ধ্যার সময় যখন গোলাগুলির আওয়াজ কমে এল, তখন আমাদের বাসা থেকে ছয়-সাতশো মিটার দূরে অবস্থিত রমজান আংকেলদের এলাকা থেকে হঠাৎ আল্লাহু আকবার শ্লোগান শোনা যেতে লাগল। আমাদের বুকের মাঝে রক্ত যেন ছলকে উঠল। তারমানে কি বিদ্রোহীরা আরও এগিয়ে আসছে? যুদ্ধ কি শেষ হয়ে আসছে? মাগরিবের ওয়াক্তের প্রায় বিশ মিনিট পরে যুদ্ধ পুরাপুরি থামল এবং ঘরে আসার পর দীর্ঘ তিন সপ্তাহের মধ্যে এই দিন আমরা প্রথম কোন আজান শুনতে পেলাম। মাগরিব এবং এশার মধ্যবর্তী সময়টাতেও আল্লাহু আকবার শ্লোগান শোনা যেতে লাগল। বিদ্রোহীদের দুঃসাহস দেখে আমরা হতবাক হয়ে গেলাম। কারণ আমাদের বাসার ঠিক পেছনেই তখনও গাদ্দাফী বাহিনী অবস্থান করছিল।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৬ষ্ঠ পর্ব): দ্বিতীয় জীবন

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৫ম পর্ব): মৃত্যুর প্রতীক্ষায়


৩০ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার। সকাল নয়টার দিকে আমরা শামীমদের বাসা থেকে বেরিয়ে আমাদের বাসার দিকে যাত্রা শুরু করলাম। রক্বম ওয়াহেদে অবস্থিত ন্যাটোর বোমায় বিদ্ধস্ত একটা স্কুল, বিদ্রোহীদের মিসাইলে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ওয়াহদা ব্যাংক এবং মেইন রোডের দুপাশে লুটপাট হওয়া দোকানপাটগুলো দেখতে দেখতে আমরা এগোচ্ছিলাম। রাস্তাগুলো গাড়ি চলাচলের অযোগ্য। রকেট পড়ে জায়গায় জায়গায় রাস্তা গর্ত হয়ে আছে। হাইডলার রোড থেকে শুরু করে রক্বম ওয়াহেদ এবং রক্বম এতনীনের সামনের মেইড রোড এক থেকে দেড় ফিট পানির নিচে তলিয়ে আছে। সম্ভবত গোলার আঘাতে জায়গায় জায়গায় ফেটে যাওয়া পানির পাইপের কারণেই এ অবস্থা। বোঝা গেল, রক্বম তালাতা এবং সাওয়াবার দিকেই এখনও যা কিছু মানুষের বসবাস আছে, রক্বম ওয়াহেদ প্রায় ফাঁকা। আর রক্বম এতনীন যেন একটা নির্জন ভূতুড়ে নগরীর কংকাল। পুরো রক্বম এতনীনে মাত্র একটা ফ্যামিলি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলাম না।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৫ম পর্ব): মৃত্যুর প্রতীক্ষায়

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৪র্থ পর্ব): নরকে প্রত্যাবর্তন


‘আশরিনে আমাদের দিনগুলো মোটামুটি ভালোই কাটছিল। প্রথম দিন আমাদেরকে বেশ ভালোই আপ্যায়ন করল। দুপুরে একটা খারুফ (ভেড়া) জবাই করে মাকরোনা দিয়ে খেতে দিল। বিকেলে আবার খুবজা দিয়ে চা। দিনের বেলাটা আমাদের ভালোই কাটল। বাসা থেকেই সমুদ্র দেখা যায়। বিকেলের দিকে বাচ্চাকাচ্চা সহ আমরা সবাই সমুদ্রে গেলাম। যুদ্ধের কোন চিহ্নও এই এলাকাতে নেই। ন্যাটোর ফাইটারও এদিকে আসে না। শুধু অ্যাপাচি হেলিকপ্টারগুলো খুব নিচে দিয়ে উড়ে, একেবারে পরিষ্কার দেখা যায়।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৪র্থ পর্ব): নরকে প্রত্যাবর্তন

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৩য় পর্ব): গন্তব্য অজানা


শুক্রবারের পুরো দুপুর এবং বিকেল আমরা না খেয়ে কাটালাম। মাস্তুরার (বাড়িওয়ালা কামালের স্ত্রী) মায়েরা এমনিতেই গরীব, তাছাড়া গত চার মাস ধরে তাদের উপর বসে বসে খাচ্ছিল মাস্তুরার মামাতো ভাই আ’ত হারাগাদের একটা বিশাল পরিবার এবং তাদের প্রতিবেশী বু’সেফীদের পরিবার, যারা মিসরাতা যুদ্ধের সময় মিসরাতা থেকে সিরতে পালিয়ে এসেছিল। সন্ধ্যার সময় খাবার দিল, কিন্তু তা নিতান্তই অপর্যাপ্ত। শুধুমাত্র কুসকুসি, কোন মাংস বা তরকারি ছাড়াই। অবশ্য কারেন্ট না থাকার কারণে কারো বাসায় মাংস বা তরকারি আশা করাটাও বোকামী। সারাদিন ধরে শহরের ভেতর থেকে যুদ্ধের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল এবং শব্দ শুনেই বুঝা যাচ্ছিল আগের দিনের থেকেও ভয়াবহ যুদ্ধ হচ্ছে। সন্ধ্যার সাথে সাথে আওয়াজ শুনে বুঝা গেল বিদ্রোহীরা যুদ্ধ শেষ করে ফিরে আসছে। সামনের রাস্তা দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় অনেক মানুষের “আল্লাহু আকবার” শ্লোগান আমাদের কানে এল।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৩য় পর্ব): গন্তব্য অজানা