পত্রপত্রিকায় বা ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা দেখা যায় আমেরিকার বিরুদ্ধে। এর একটা কারণ তো পরিষ্কার – আমেরিকা আসলেই বিশ্বের নাম্বার ওয়ান কালপ্রিট। তা না হলে তারা তাদের সুপার পাওয়ার মেইন্টেইন করতে পারত না।
কিন্তু আমেরিকা বিরোধিতার এটাই একমাত্র কারণ না। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, পাবলিক আমেরিকা বিরোধিতা বেশি খায়। সেজন্য দেখা যায় যারা আসলে আমেরিকা বিরোধী না, বা ইনফ্যাক্ট যারা নিজেরাই আমেরিকার পাপেট, তারাও প্রকাশ্যে প্রচন্ড আমেরিকা বিরোধী সাজে এবং পাবলিকের মন জয় করার জন্য অন্যদেরকে আমেরিকাপন্থী, বা যেকোনো অপরাধকে আমেরিকার ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করতে থাকে।
কোনো ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, সেটা বোঝার একটা উপায় হচ্ছে ঐ ঘটনায় কারা লাভবান হচ্ছে, সেটা লক্ষ্য করা।
কিন্তু এই পদ্ধতি কোনো ফুলপ্রুফ পদ্ধতি না। কারণ একই ঘটনায় একাধিক পক্ষ লাভবান হতে পারে। একজনের লাভের গুড় অন্য কেউও খেতে পারে। আবার আমরা যেটাকে স্বল্পকালীন লাভ মনে করছি, কোনো পক্ষ হয়তো সেটাকেই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি মনে করতে পারে।
জেনারেল হাফতার একসময় সিআইএ এজেন্ট ছিলেন – এটা সবাই জানে। কিন্তু ঠিক কতদিন পর্যন্ত, এটা কেউ পরিষ্কারভাবে জানে না। সব জায়গায় এমনভাবে বর্ণনা করা হয়, যেন হাফতার ২০ বছর ধরেই সিআইএর এজেন্ট ছিলেন। কিন্তু লিবিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিস এইটের প্রফেসর জালাল হারশাউইর মতে, ব্যাপারটা পুরাপুরি সত্য না।
১৯৮৭ সালে চাদ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে যখন তিনি ফরাসিদের হাতে গ্রেপ্তার হন, তখন আন্তর্জাতিক চাপ এড়ানোর জন্য গাদ্দাফী তার সাথে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে। হাফতারের সামনে তখন দুইটা অপশন ছিল – সারা জীবন বন্দী অবস্থায় কাটানো, অথবা আমেরিকান/ফ্রেঞ্চদের সাথে যোগ দেওয়া। হাফতার দ্বিতীয় অপশনটা গ্রহণ করেন।
আল-জাজিরার এই ডকুমেন্টারিটা খুবই ইন্টারেস্টিং। কেন, সেটা ব্যাখ্যা করছি। তবে এটা দেখলে আবারও বুঝতে পারবেন কেন আমি হাবিজাবি ভিত্তিহীন প্রপাগান্ডা সাইটের কন্সপিরেসী থিওরীর চেয়ে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ আর্টিকেল/ডকুমেন্টারি বেশি পছন্দ করি।
প্রচলিত ফেক নিউজের মতো এই ডকুমেন্টারিতে আইএসের কাছে অমুক অস্ত্র পাওয়া গেছে বলেই খালাস হয়নি, সেটা ট্রেস করে বের করা হয়েছে কোথা থেকে কীভাবে এসেছে। কিন্তু তারপরেও ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু তথ্য বিকৃতি করা হয়েছে। কয়েকটা পয়েন্ট উল্লেখ করছি।
আমেরিকার একটা ইউনিভার্সিটিতে তিনজন মুসলমান শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এবং স্বাভাবিকভাবেই সিএনএন ফক্স নিউজ সহ পশ্চিমা মিডিয়াগুলো এটাকে কম গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে। আর যখনই তারা এই নিউজটা লিখছে তখনই তারা হত্যাকারীকে জাস্ট “এ ম্যান” হিসেবে সম্বোধন করছে। যদি ব্যাপারটা বিপরীত হতো, অর্থাৎ কোন মুসলমান যদি দুই-তিনজন খ্রিস্টান বা ইহুদীকে হত্যা করত, তাহলে কিন্তু এটাই লীড নিউজ হয়ে যেতো। এবং পশ্চিমা মিডিয়াগুলো তখন হত্যাকারীকে “মুসলিম টেরোরিস্ট” হিসেবে উল্লেখ করত।