Category Archives: আমার দিনকাল

আমার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনা এবং অভিজ্ঞতা

মুরসিকে নিয়ে বইয়ে আমার দুটি লেখা


একটা আনন্দের সংবাদ দেই। মোহাম্মদ মুরসিকে নিয়ে “প্রচ্ছদ প্রকাশন” থেকে বের হওয়া “প্রেসিডেন্ট মুরসি: আরব বসন্ত থেকে শাহাদাত” বইটিতে আমার দুটি লেখা স্থান পেয়েছে।

এর মধ্যে একটি লেখা হয়তো অনেকেই পড়েছেন, মুরসির মৃত্যুর পর ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম, প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুরসির অভিষেকের দিনটি নিয়ে একটা লেখার অনুবাদ। সেটা পড়তে পারেন এই লিঙ্ক থেকেও। এটি ছাড়াও বইটিতে আমার আরেকটি লেখাও আছে।

বইটিতে মোট ১৬টি লেখা আছে, মৌলিক এবং অনুবাদ মিলিয়ে। সূচিপত্র থেকে অনুবাদকদের নাম দেখা যাচ্ছে না, মৌলিক লেখকদের দুজন পরিচিত লেখক আছেন – ডঃ আব্দুস সালাম আজাদী এবং ফেসবুকে জনপ্রিয় রাজনৈতিক লেখক মোহাম্মদ নোমান ভাই।

বইটি পাওয়া যাবে এই মাসের ১০ তারিখ থেকে। তবে প্রচ্ছদ প্রকাশনের এই লিঙ্ক থেকে এখনই প্রি-অর্ডার করে রাখতে পারবেন। বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ১০৪। মূল্য ১৮০ টাকা।

কেউ যদি পড়েন, অবশ্যই মতামত জানাতে ভুলবেন না।

আগস্ট যুদ্ধের সেই দিনগুলো


লিবিয়াতে নিরাপদে চলাফেরার কতগুলো অলিখিত নিয়ম আছে। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে কিছু ফেসবুক গ্রুপে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া কোথাও কোনো গন্ডগোল আছে কিনা, রাস্তাঘাট বন্ধ আছে কিনা। অথবা গোলাগুলির শব্দ শুনেই বোঝার চেষ্টা করা ওটা কোনো উৎসব উপলক্ষ্যে আনন্দের গোলাগুলি, নাকি সংঘর্ষের গোলাগুলি, সংঘর্ষ হলে সেটা কতটুকু তীব্র।

কিন্তু গত ২৬ আগস্ট বিকেল বেলা আমি যখন অফিস থেকে বের হয়েছিলাম, তখন এর কোনোটিই করিনি। নিঃসন্দেহে এটা বড় ধরনের ভুল ছিল, কিন্তু তখনও আমি জানতাম না এই ভুলটিই হয়তো আমার জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছিল, ২০১১ সালের পর থেকে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো।

Continue reading আগস্ট যুদ্ধের সেই দিনগুলো

লিবিয়াতে নারীদের সামাজিক অবস্থান


নারী দিবস উপলক্ষ্যে লিবিয়ায় নারীদের অবস্থার ব্যাপারে কিছু না লিখলে সেটা অন্যায় হবে 

ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে উঠার পর ব্যাপারটা আমি প্রথম লক্ষ্য করি। এক লিবিয়ান ফ্রেন্ডের সাথে আরেক লিবিয়ান ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম একটা নোটের জন্য। যার সাথে গিয়েছি, সে দরজয় বেল টিপে দরজার সামনে থেকে দূরে গিয়ে উল্টোদিক ফিরে দাঁড়িয়ে রইল। আমি প্রথমে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু তার দেখাদেখি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপারটা কী?

Continue reading লিবিয়াতে নারীদের সামাজিক অবস্থান

প্রতি ঈদে লিবিয়ানরা করে গালাগালি, আর আমরা করি বকাবকি


ঈদের দিন সকাল বেলা পুরো আরব বিশ্বে গালাগালির ধুম পড়ে যায়। অপরিচিতরা তাও একটু রেহাই পায়, কিন্তু পরিচিতদের কোন রেহাই নেই। দেখা হওয়া মাত্রই একজন আরেকজনকে সমানে গালাগালি করতে থাকে। কি, বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে ব্যখ্যা করছি।

আমরা যেরকম ঈদের দিন একজন আরেকজনের সাথে কোলাকুলি করি, আরবীয়রা কিন্তু সেরকম কোলাকুলি করে না। তারা একজন আরেকজনের গালের পাশে গাল নিয়ে চুমুর মতো শব্দ করে। এটাকে ইচ্ছা করলে চুমাচুমিও বলা যায়। কিন্তু যেহেতু তারা প্রকৃতপক্ষে চুমু দেয় না, জাস্ট গালের পাশে গাল রাখে, কাজেই একে গালাগালি বলাই ভালো!

আর এই সূত্র অনুসারে এশীয়রা যে কোলাকুলি করে, সেটা যেহেতু বুকের সাথে বুক মিলিয়েই করা হয়, কাজেই তাকে ইচ্ছে করলে বুকাবুকি বা বকাবকিও বলা যেতে পারে!

ঈদ হল একটা প্রধান ধর্মীয় উত্‍সব। আর এই দিনে কিনা মনুষ্য জাতির একদল বকাবকি আর আরেক দল গালাগালি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বড়ই আফসোস!

প্রথম লেখা: সামহোয়্যার ইন ব্লগে

কথা বলতে না পারার কষ্ট


অর্থের কষ্ট, ক্ষুধার কষ্ট, ঘুমের কষ্ট অনেকেই জীবনের কোন না কোন সময় অনুভব করেছে। কিন্তু কথা না বলতে পারার কষ্টটা কেমন?

অস্কারজয়ী আর্জেন্টাইন একটা মুভি আছে, এল সিক্রেতো দেসুস ওহোস – দ্যা সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ। সেখানে স্ত্রীর হত্যাকারীর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এক ভদ্রলোক হত্যাকারীকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় এবং বছরের পর বছর ধরে বন্দী করে রাখে। এই দীর্ঘ সময়ে সে খুনীকে নিয়মিত খাবার-দাবার দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু তার সাথে একটা কথাও বলে নি। মুভির শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, বন্দী খুনী তার কাছে তার মুক্তির জন্য আবেদন করছে না, বরং অনুনয় করছে তার সাথে অন্তত একটু কথা বলার জন্য!

Continue reading কথা বলতে না পারার কষ্ট

‘লিবিয়ার শতবর্ষের নির্জনতা’ : মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার সাক্ষাৎকার


ইরফানুর রহমান রাফিন একজন জনপ্রিয় ব্লগার। সম্প্রতি তিনি নিজের ব্লগে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎ প্রকাশ করা শুরু করেছেন। প্রথম সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জনপ্রিয় রাজনৈতিক সমালোচক অনুপম দেবাশীষ রয়ের। আর দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারটি ছিল আমার।

এই সাক্ষাৎকারে লিবিয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, গাদ্দাফীর উত্থান, তার শাসণামলের ভালোমন্দ দিকগুলো, ২০১১ সালের বিদ্রোহের সূচনা, দেশী-বিদেশী শক্তির প্রভাব, বিদ্রোহ পরবর্তী লিবিয়ার রাজনীতি, আল-ক্বায়েদা-আইসিসের উত্থান, তাদের ক্ষমতার উৎস, লিবিয়ার ভবিষ্যৎ সহ অনেক কিছু উঠে এসেছে।

মূল সাক্ষাৎকারটি পড়তে পারেন এই লিংক থেকে

Continue reading ‘লিবিয়ার শতবর্ষের নির্জনতা’ : মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার সাক্ষাৎকার

প্রবাসীদের দেশপ্রেম


ছোটবেলায় আমরা মিসুরাতা স্কুলে যেতাম গেত্তুনের (পেছনে হুডযুক্ত পিকআপ ট্রাক) পেছনে চড়ে। আমাদের যাওয়ার পথে একটা ওয়ার্কশপ চোখে পড়ত, যেটার একটা পিলারের গায়ে কালো কালি দিয়ে বড় করে “বাংলাদেশ” লেখা ছিল। অন্য সবার চোখে পড়লেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত লেখাটা আমার চোখে পড়ে নি।

Continue reading প্রবাসীদের দেশপ্রেম

গাদ্দাফীর অধীনে আমাদের শেষ রোযা এবং শেষ ঈদের স্মৃতি


ঈদ এক বছর পরপরই আসে। বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে একটা ঈদ আসে দুই মাস পরে,আরেকটা আসে দশমাস পরে। কিন্তু আমাদের জন্য এবার ঈদ এসেছে দুই বছর পরে। কারণ গত বছরের কোন ঈদই আমরা ঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। রোযার ঈদের সময় আমরা ছিলাম চারদিকে বিদ্রোহী সৈন্যদের দ্বারা অবরুদ্ধ শহরে। আর কুরবানীর ঈদের সময় ছিলাম মাত্র যুদ্ধ কাটিয়ে উঠা বিদ্ধস্ত শহরে। জীবনে প্রথমবারের মতো কুরবানী ছাড়াই ঈদ উদযাপন করতে বাধ্য হয়েছিলাম আমরা।

Continue reading গাদ্দাফীর অধীনে আমাদের শেষ রোযা এবং শেষ ঈদের স্মৃতি

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৮ম পর্ব): প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন


২২ শে অক্টোবর, শনিবার। সকাল দশটার দিকে আমরা খামসিন থেকে বের হয়ে সিরতের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। সাথে প্রচুর পরিমাণ খাবার-দাবার। যাচ্ছি একটা ট্রাকের পেছনে চড়ে। খামসিনের চেক পয়েন্ট থেকে বিদ্রোহীরা এই ট্রাকওয়ালাকে রিকোয়েস্ট করে আমাদেরকে উঠিয়ে দিয়েছে। রাস্তা দিয়ে ফেরার সময় দেখলাম যুদ্ধের গাড়ি তেমন নেই, কিন্তু সাধারণ পিকআপে আর ট্রাকে করে মানুষ দামী দামী গাড়ি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন সহ দামী দামী জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বিভিন্ন দোকানপাট এবং বড়লোকদের বাড়ি থেকে লুটপাট করা জিনিস এগুলো।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৮ম পর্ব): প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৭ম পর্ব): বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে


উদ্ধার হওয়ার পর আমাদেরকে বেশিক্ষণ রাস্তায় অপেক্ষা করতে হল না। সেই দাড়ি-টুপি এবং চশমা ওয়ালা বৃদ্ধ আমাদেরকে এক যোদ্ধার গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজে পেছন পেছন আসতে লাগল। সেই যোদ্ধা গাড়িতে উঠেই প্রথমে আমাদেরকে বলল, গুল গাদ্দাফী ক্যাল্‌ব। অর্থাৎ, বল গাদ্দাফী কুত্তা। আমরা সবাই-ই সম্মতিসূচক একটা হাসি দিলাম, কিন্তু প্রথমে কেউই উচ্চারণ করলাম না। গাদ্দাফীর এই মুহূর্তের নীতি খারাপ, কিন্তু জন্মের পর থেকে তো তার দেশেই খেয়ে পরে বড় হচ্ছি, এতো সহজে তাকে এভাবে গালি দেই কিভাবে?

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৭ম পর্ব): বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে