Category Archives: লিবিয়ার রাজনীতি

লিবিয়ার জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জঙ্গীবাদ সমস্যা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ

লিবিয়া সিভিল ওয়ার গাইড


অনেকেই ইদানীং নতুন করে শুরু হওয়া লিবিয়া যুদ্ধ ফলো করছেন। কিন্তু লিবিয়ার পরিস্থিতি এতো জটিল, কনটেক্সট জানা না থাকলে কিছু ভুল বোঝাবোঝির সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য এখানে কিছু সহজ টিপস দিলাম:


১। “আর্মি” শব্দটাকে সিরিয়াসলি নিবেন না।

সত্যিকার আর্মি বলতে লিবিয়াতে কিছু নাই। “লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি” বা এলএনএ বলতে মূলত জেনারেল হাফতারের বাহিনীকে বোঝানো হয়। কিন্তু সেটা ঠিক ট্রেডেশনাল আর্মি না, আর চরিত্রগত ভাবে ন্যাশনাল তো না-ই।

হাফতারের বাহিনীর দুইটা অংশ। একটা অংশ অর্থাৎ কিছু ব্রিগেড সত্যি সত্যিই প্রফেশনাল আর্মির স্ট্রাকচার ফলো করে। এদের সদস্যরা এবং কমান্ডাররা অনেকেই গাদ্দাফীর আমলের সেনাবাহিনী থেকে আসা। এছাড়াও হাফতার নিজেও গত সাড়ে চার বছরে অনেক নতুন সেনাসদস্যকে ট্রেনিং দিয়ে নিজের বাহিনীকে মোটামুটি একটা অর্গানাইজড স্ট্রাকচারে রূপ দিয়েছেন।

Continue reading লিবিয়া সিভিল ওয়ার গাইড

জেনারেল হাফতার কি এখনও সিআইএ এজেন্ট?


জেনারেল হাফতার একসময় সিআইএ এজেন্ট ছিলেন – এটা সবাই জানে। কিন্তু ঠিক কতদিন পর্যন্ত, এটা কেউ পরিষ্কারভাবে জানে না। সব জায়গায় এমনভাবে বর্ণনা করা হয়, যেন হাফতার ২০ বছর ধরেই সিআইএর এজেন্ট ছিলেন। কিন্তু লিবিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিস এইটের প্রফেসর জালাল হারশাউইর মতে, ব্যাপারটা পুরাপুরি সত্য না।

১৯৮৭ সালে চাদ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে যখন তিনি ফরাসিদের হাতে গ্রেপ্তার হন, তখন আন্তর্জাতিক চাপ এড়ানোর জন্য গাদ্দাফী তার সাথে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে। হাফতারের সামনে তখন দুইটা অপশন ছিল – সারা জীবন বন্দী অবস্থায় কাটানো, অথবা আমেরিকান/ফ্রেঞ্চদের সাথে যোগ দেওয়া। হাফতার দ্বিতীয় অপশনটা গ্রহণ করেন।

Continue reading জেনারেল হাফতার কি এখনও সিআইএ এজেন্ট?

গাদ্দাফীকে উৎখাত করতে গিয়ে আমেরিকা যেভাবে ভজগট পাকিয়ে ফেলেছিল!


আশির দশকে আমেরিকা গাদ্দাফীকে হত্যার আয়োজন করছিল।

শুধু আমেরিকা বললে ভুল হবে। সেসময় বিভিন্ন দেশের সাথে গাদ্দাফীর সম্পর্ক খারাপ ছিল। সিআইএর তথ্য অনুযায়ী আমেরিকা ছাড়াও ফ্রান্স, চাদ, মিসর, সুদান, মরক্কো, সৌদি আরব এমনকি ইরাক পর্যন্ত গাদ্দাফীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আগ্রহী বিদ্রোহীদেরকে সাহায্য করে আসছিল।

গাদ্দাফীকে সরাতে চাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম কারণ ছিল। ফ্রান্স এবং আমেরিকার প্রধান কারণ ছিল চাদের উপর গাদ্দাফীর হস্তক্ষেপ। চাদ ছিল ফ্রান্সের কলোনী। স্বাধীনতার পরেও সেখানে ফ্রান্সের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কিন্তু গাদ্দাফী যখন ১৯৭৮ সালে চাদের একটি অংশকে লিবিয়ার ভূখন্ড দাবি করে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠায়, তখনই প্রধানত ফ্রান্স এবং সেই সাথে আমেরিকা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সম্ভাবনা বিচরণ করতে শুরু করে।

Continue reading গাদ্দাফীকে উৎখাত করতে গিয়ে আমেরিকা যেভাবে ভজগট পাকিয়ে ফেলেছিল!

ম্যারি কোলভিনের প্রাইভেট ওয়ার


ফিচার ইমেজে গাদ্দাফীর সাথে ম্যারি কোলভিনের যে দৃশ্যটা দেখা যাচ্ছে, সেটা বাস্তবের না, A Private War সিনেমার। তবে বাস্তবেও সানডে টাইমসের সাংবাদিক ম্যারি কোলভিন গাদ্দাফীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। একবার না, একাধিক বার।

১৯৮৬ সালে রিগ্যান প্রশাসন যখন লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাসভবনের উপর বিমান হামলা (অপারেশন এল-ডোরাডো ক্যানিয়ন) পরিচালনা করে, তখন ম্যারি কোলভিনই ছিলেন প্রথম সাংবাদিক, যিনি গাদ্দাফির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।

বাস্তবে গাদ্দাফীর সাথে ম্যারি কোলভিন; Image Source: BBC

পরবর্তীতে ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পরেও গাদ্দাফির প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। ইনফ্যাক্ট গাদ্দাফী প্রশাসন ম্যারি কোলভিনের রিকোয়েস্টে সাড়া দিয়ে মোট তিনজন সাংবাদিককে গাদ্দাফীর সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেয়। বাকি দুইজন সাংবাদিক কারা হবেন, সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তারা ম্যারির উপরেই ছেড়ে দেয়।

Continue reading ম্যারি কোলভিনের প্রাইভেট ওয়ার

আগস্ট যুদ্ধের সেই দিনগুলো


লিবিয়াতে নিরাপদে চলাফেরার কতগুলো অলিখিত নিয়ম আছে। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে কিছু ফেসবুক গ্রুপে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া কোথাও কোনো গন্ডগোল আছে কিনা, রাস্তাঘাট বন্ধ আছে কিনা। অথবা গোলাগুলির শব্দ শুনেই বোঝার চেষ্টা করা ওটা কোনো উৎসব উপলক্ষ্যে আনন্দের গোলাগুলি, নাকি সংঘর্ষের গোলাগুলি, সংঘর্ষ হলে সেটা কতটুকু তীব্র।

কিন্তু গত ২৬ আগস্ট বিকেল বেলা আমি যখন অফিস থেকে বের হয়েছিলাম, তখন এর কোনোটিই করিনি। নিঃসন্দেহে এটা বড় ধরনের ভুল ছিল, কিন্তু তখনও আমি জানতাম না এই ভুলটিই হয়তো আমার জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছিল, ২০১১ সালের পর থেকে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো।

Continue reading আগস্ট যুদ্ধের সেই দিনগুলো

গণমানুষের নেতা গাদ্দাফী যেভাবে স্বৈরশাসক হলেন


সত্তরের দশকের গাদ্দাফী ছিল সত্যিকার অর্থেই জনগণের নেতা। সে সময় প্রায় প্রতিদিন গাদ্দাফী রাস্তায় বের হতো। একা, কোনো বডিগার্ড ছাড়া। সে সময় ত্রিপলীতে থাকা বাংলাদেশীদের অনেকেও গাদ্দাফীকে সরাসরি দেখেছে। কোনো অনুষ্ঠানে না, হঠাৎ কোনো রাস্তায়।

নিজের ফোক্স ওয়াগন গাড়িটা নিয়ে গাদ্দাফী একেক দিন একেক জায়গায় চলে যেত। কোনো স্কুলে, ইউনিভার্সিটিতে, মার্কেটে, হসপিটালে, ব্যাংকে। অথবা জনগণের ভীড়ে, ত্রিপলীর আশেপাশের কোনো গ্রামে। গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে মিশত, কথা বলত, তাদের মতামত জানতে চাইত।

Continue reading গণমানুষের নেতা গাদ্দাফী যেভাবে স্বৈরশাসক হলেন

সা’দী গাদ্দাফীর বর্তমান ও ভবিষ্যত


গাদ্দাফীর ছেলে সা’দী গাদ্দাফীকে একটি হত্যা মামলায় নির্দোষ হিসেবে রায় দিয়েছে ত্রিপলীর একটি আদালত।

সা’দী গাদ্দাফীর তৃতীয় ছেলে। ছোটকালে আমরা তাকে ফুটবলার হিসেবেই বেশি চিনতাম। লিবিয়ার ন্যাশনাল ফুটবল টীমের ক্যাপ্টেন ছিল কিছুদিন। খেলোয়াড় হিসেবে মোটামুটি ভালো মানের, কিন্তু লিবিয়াতে তার চেয়েও বেটার প্লেয়ার ছিল। তারপরেও মিডিয়াতে সারাক্ষণ ফোকাসে থাকত। দেশের ভেতরে খেলার সময় প্রায়ই দেখা যেত পুরা টীম তার জন্য অপেক্ষা করছে, শেষ মুহূর্তে সে হেলিকপ্টারে করে এসে নামার পর খেলা শুরু হচ্ছে 

Continue reading সা’দী গাদ্দাফীর বর্তমান ও ভবিষ্যত

গাদ্দাফীর সাথে সারকোজির প্রতারণা


নিকোলাস সারকোজি পুলিশ কাস্টডিতে। ইলেকশন ক্যাম্পেইনের জন্য গাদ্দাফীর কাছ থেকে ফান্ডিং নেওয়ার অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

২০০৭ সালের নির্বাচনে ক্যাম্পেইনের জন্য গাদ্দাফী সারকোজিকে ৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল। বলা যায় গাদ্দাফী নিজ হাতে সারকোজিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। অথচ সেই সারকোজি বলতে গেলে একক প্রচেষ্টায় গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে জাতিসংঘে হামলার অনুমোদন করায় এবং তা পাশ হতে না হতেই বিমান হামলা শুরু করে।

Continue reading গাদ্দাফীর সাথে সারকোজির প্রতারণা

ইরাক আক্রমণের দিনই কেন লিবিয়ায় আক্রমণ?


১৯ মার্চ। ১৫ বছর আগের এই দিনে শুরু হয়েছিল ইরাক আক্রমণ, আর ৭ বছর আগে একই দিনে শুরু হয়েছিল লিবিয়া আক্রমণ।

বছরে ৩৬৫টা দিন থাকতে ঠিক একই দিনে কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দুইটা প্রধান যুদ্ধ শুরু হলো? কাকতালীয়? না ষড়যন্ত্র?

Continue reading ইরাক আক্রমণের দিনই কেন লিবিয়ায় আক্রমণ?

লিবিয়াতে নারীদের সামাজিক অবস্থান


নারী দিবস উপলক্ষ্যে লিবিয়ায় নারীদের অবস্থার ব্যাপারে কিছু না লিখলে সেটা অন্যায় হবে 

ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে উঠার পর ব্যাপারটা আমি প্রথম লক্ষ্য করি। এক লিবিয়ান ফ্রেন্ডের সাথে আরেক লিবিয়ান ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম একটা নোটের জন্য। যার সাথে গিয়েছি, সে দরজয় বেল টিপে দরজার সামনে থেকে দূরে গিয়ে উল্টোদিক ফিরে দাঁড়িয়ে রইল। আমি প্রথমে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু তার দেখাদেখি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপারটা কী?

Continue reading লিবিয়াতে নারীদের সামাজিক অবস্থান