Tag Archives: মিসরাতা

প্রবাসীদের দেশপ্রেম


ছোটবেলায় আমরা মিসুরাতা স্কুলে যেতাম গেত্তুনের (পেছনে হুডযুক্ত পিকআপ ট্রাক) পেছনে চড়ে। আমাদের যাওয়ার পথে একটা ওয়ার্কশপ চোখে পড়ত, যেটার একটা পিলারের গায়ে কালো কালি দিয়ে বড় করে “বাংলাদেশ” লেখা ছিল। অন্য সবার চোখে পড়লেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত লেখাটা আমার চোখে পড়ে নি।

Continue reading প্রবাসীদের দেশপ্রেম

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৮ম পর্ব): প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন


২২ শে অক্টোবর, শনিবার। সকাল দশটার দিকে আমরা খামসিন থেকে বের হয়ে সিরতের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। সাথে প্রচুর পরিমাণ খাবার-দাবার। যাচ্ছি একটা ট্রাকের পেছনে চড়ে। খামসিনের চেক পয়েন্ট থেকে বিদ্রোহীরা এই ট্রাকওয়ালাকে রিকোয়েস্ট করে আমাদেরকে উঠিয়ে দিয়েছে। রাস্তা দিয়ে ফেরার সময় দেখলাম যুদ্ধের গাড়ি তেমন নেই, কিন্তু সাধারণ পিকআপে আর ট্রাকে করে মানুষ দামী দামী গাড়ি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন সহ দামী দামী জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বিভিন্ন দোকানপাট এবং বড়লোকদের বাড়ি থেকে লুটপাট করা জিনিস এগুলো।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৮ম পর্ব): প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৭ম পর্ব): বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে


উদ্ধার হওয়ার পর আমাদেরকে বেশিক্ষণ রাস্তায় অপেক্ষা করতে হল না। সেই দাড়ি-টুপি এবং চশমা ওয়ালা বৃদ্ধ আমাদেরকে এক যোদ্ধার গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজে পেছন পেছন আসতে লাগল। সেই যোদ্ধা গাড়িতে উঠেই প্রথমে আমাদেরকে বলল, গুল গাদ্দাফী ক্যাল্‌ব। অর্থাৎ, বল গাদ্দাফী কুত্তা। আমরা সবাই-ই সম্মতিসূচক একটা হাসি দিলাম, কিন্তু প্রথমে কেউই উচ্চারণ করলাম না। গাদ্দাফীর এই মুহূর্তের নীতি খারাপ, কিন্তু জন্মের পর থেকে তো তার দেশেই খেয়ে পরে বড় হচ্ছি, এতো সহজে তাকে এভাবে গালি দেই কিভাবে?

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৭ম পর্ব): বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৬ষ্ঠ পর্ব): দ্বিতীয় জীবন


১৫ই অক্টোবর ২০১১

সারাদিন প্রচন্ড যুদ্ধ চলল। সন্ধ্যার সময় যখন গোলাগুলির আওয়াজ কমে এল, তখন আমাদের বাসা থেকে ছয়-সাতশো মিটার দূরে অবস্থিত রমজান আংকেলদের এলাকা থেকে হঠাৎ আল্লাহু আকবার শ্লোগান শোনা যেতে লাগল। আমাদের বুকের মাঝে রক্ত যেন ছলকে উঠল। তারমানে কি বিদ্রোহীরা আরও এগিয়ে আসছে? যুদ্ধ কি শেষ হয়ে আসছে? মাগরিবের ওয়াক্তের প্রায় বিশ মিনিট পরে যুদ্ধ পুরাপুরি থামল এবং ঘরে আসার পর দীর্ঘ তিন সপ্তাহের মধ্যে এই দিন আমরা প্রথম কোন আজান শুনতে পেলাম। মাগরিব এবং এশার মধ্যবর্তী সময়টাতেও আল্লাহু আকবার শ্লোগান শোনা যেতে লাগল। বিদ্রোহীদের দুঃসাহস দেখে আমরা হতবাক হয়ে গেলাম। কারণ আমাদের বাসার ঠিক পেছনেই তখনও গাদ্দাফী বাহিনী অবস্থান করছিল।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (৬ষ্ঠ পর্ব): দ্বিতীয় জীবন

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (২য় পর্ব): বিদ্রোহীদের কবলে


১৬ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার। আগের দিন রাতের বেলা ছাড়াছাড়া ভাবে ঘুম হয়েছিল, তবুও খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল। নাস্তা করে এলাকাটা দেখতে বের হয়ে আবিষ্কার করলাম পুরো এলাকা ফাঁকা। রাতে রাতেই বেশির ভাগ মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। মেইন রোডে গিয়ে দেখি রাস্তার দুপাশের গাছগুলো ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে উপড়ে পড়ে আছে। দুপাশের দোকানগুলোর দরজা, দেয়াল ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে আছে। কাঁচের টুকরার জন্য রাস্তায় হাঁটা যাচ্ছে না। এলাকার প্রায় প্রতিটা দোতলা-তিনতলার বাড়ির দেয়ালে কয়েকটা করে গুলির ছিদ্র। আশেপাশের বাঙ্গালিদের বাসায় গিয়েও একটু খোঁজ-খবর নিলাম। সৌরভরা, মুক্তারা, হীরণ ভাইরা – সবাই-ই ভালো আছে।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (২য় পর্ব): বিদ্রোহীদের কবলে

লিবিয়া যুদ্ধে আমি (১ম পর্ব): ব্যাট্‌ল ফর সিরত


২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আটমাস ধরে পুরো লিবিয়া জুড়ে যত যুদ্ধ হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধটি হয়েছে গাদ্দাফীর জন্মস্থান সিরতে। সিরতের মধ্যে যে এলাকাটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো এক মাস পাঁচদিন ব্যাপী যে এলাকাটিতে তুমুল যুদ্ধ চলেছে এবং যে এলাকাটিতে শেষ পর্যন্ত গাদ্দাফী আত্মগোপন করে ছিল, তার নাম রক্বম এতনীন (এরিয়া নাম্বার টু)। আর দুর্ভাগ্যবশত আমরা ছিলাম সেই রক্বম এতনীনের ঠিক পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জাফরানের অধিবাসী। যুদ্ধের শেষ সপ্তাহ পর্যন্তও আমরা হাজার হাজার মিজাইল, রকেট, মর্টার এবং লক্ষ লক্ষ রাউন্ড গোলাগুলির মধ্য দিয়েও সেই এলাকাতেই রয়ে গিয়েছিলাম। বাঁচব – এই আশা একেবারেই ছিল না। কিন্তু সম্ভাব্যতার সকল সূত্রকে ভুল প্রমাণিত করে শেষ পর্যন্ত আমরা বেঁচে গেছি।

Continue reading লিবিয়া যুদ্ধে আমি (১ম পর্ব): ব্যাট্‌ল ফর সিরত

লিবিয়ার বিজ্ঞানসম্মত যুদ্ধ


লিবিয়ার যুদ্ধ সম্ভবত খুবই বিজ্ঞানসম্মত যুদ্ধ। এই যুদ্ধ একেবারে নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র মেনে চলে – প্রত্যেক বাহিনীরই একটা সমান ও বিপরীত বাহিনী আছে 

২০১১ সালে সিরতে গাদ্দাফী বাহিনী খুবই শক্তিশালী ছিল। তাই তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য শুধু মিসরাতা থেকেই ছয় হাজার যোদ্ধা সিরতে গিয়েছিল। আর বেনগাজীসহ মোট যোদ্ধা ছিল ১৪ হাজার। কিন্তু এবার সিরতে আইএস এর সদস্য সংখ্যা প্রকাশ্যে খুবই কম। সর্বোচ্চ ২০০ হবে। আর আশ্চর্যজনকভাবে তাদেরকে দমন করার জন্য আসা মিসরাতীদের সংখ্যাও কম। সিরতের পশ্চিমে সব মিলিয়ে ৪০-৫০টা গাড়ি দেখলাম সিরত থেকে বের হওয়ার সময়।

Continue reading লিবিয়ার বিজ্ঞানসম্মত যুদ্ধ