Tag Archives: ত্রিপলী

মাইদান আল-জেজায়ের


ত্রিপলীর কেন্দ্রে অবস্থিত এই চত্বরের নাম আলজেরিয়া স্কয়ার বা মাইদান আল-জেজায়ের

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, লিবিয়ার চত্বরের নাম আলজেরিয়া কেন? কারণ পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে যখন আলজেরিয়াতে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল, তখন এই চত্বরটা ব্যবহৃত হতো আলজেরিয়ানদেরকে সাহায্য করার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। লিবিয়ান নারীরা এখানে এসে তাদের স্বর্ণ-গয়না বিক্রি করে সেই টাকা দান করে দিতেন আলজেরিয়ানদেরকে দেওয়ার জন্য। ১৯৬২ সালে তাই চত্বরটির নাম রাখা হয় আলজেরিয়া চত্বর

১৯৬২ সালের পূর্ব পর্যন্ত জায়গাটির নাম ছিল ক্যাথেড্রাল স্কয়ার বা পিয়াজ্জা দেলে ক্যাতেদ্রালে। কারণ চত্বরটির সামনেই যে বিশাল মসজিদটি দেখা যাচ্ছে, সেটি ছিল ১৯২৩ সালে ইতালিয়ানদের দ্বারা তৈরি একটি রোমান ক্যাথলিক চার্চ/ক্যাথেড্রাল। গাদ্দাফী ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭০ সালে গির্জাটির কিছু সংস্কার করে একে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয় এবং এর নাম দেওয়া হয় জামাল আব্দুল নাসের মসজিদ

আলজেরিয়া স্কয়ার ত্রিপলীর সবচেয়ে বিখ্যাত ল্যান্ডমার্কগুলোর একটা। ২০১১ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ত্রিপলীর প্রায় সবগুলো আন্দোলন বা প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হওয়ার স্থান এটি। যদি যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়, তাহলেই কেবল মিছিল এখান থেকে গ্রিন স্কয়ারের (মাইদান আশ্‌শুহাদার) দিকে যায়।

আগস্ট যুদ্ধের সেই দিনগুলো


লিবিয়াতে নিরাপদে চলাফেরার কতগুলো অলিখিত নিয়ম আছে। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে কিছু ফেসবুক গ্রুপে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া কোথাও কোনো গন্ডগোল আছে কিনা, রাস্তাঘাট বন্ধ আছে কিনা। অথবা গোলাগুলির শব্দ শুনেই বোঝার চেষ্টা করা ওটা কোনো উৎসব উপলক্ষ্যে আনন্দের গোলাগুলি, নাকি সংঘর্ষের গোলাগুলি, সংঘর্ষ হলে সেটা কতটুকু তীব্র।

কিন্তু গত ২৬ আগস্ট বিকেল বেলা আমি যখন অফিস থেকে বের হয়েছিলাম, তখন এর কোনোটিই করিনি। নিঃসন্দেহে এটা বড় ধরনের ভুল ছিল, কিন্তু তখনও আমি জানতাম না এই ভুলটিই হয়তো আমার জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছিল, ২০১১ সালের পর থেকে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো।

Continue reading আগস্ট যুদ্ধের সেই দিনগুলো

সা’দী গাদ্দাফীর বর্তমান ও ভবিষ্যত


গাদ্দাফীর ছেলে সা’দী গাদ্দাফীকে একটি হত্যা মামলায় নির্দোষ হিসেবে রায় দিয়েছে ত্রিপলীর একটি আদালত।

সা’দী গাদ্দাফীর তৃতীয় ছেলে। ছোটকালে আমরা তাকে ফুটবলার হিসেবেই বেশি চিনতাম। লিবিয়ার ন্যাশনাল ফুটবল টীমের ক্যাপ্টেন ছিল কিছুদিন। খেলোয়াড় হিসেবে মোটামুটি ভালো মানের, কিন্তু লিবিয়াতে তার চেয়েও বেটার প্লেয়ার ছিল। তারপরেও মিডিয়াতে সারাক্ষণ ফোকাসে থাকত। দেশের ভেতরে খেলার সময় প্রায়ই দেখা যেত পুরা টীম তার জন্য অপেক্ষা করছে, শেষ মুহূর্তে সে হেলিকপ্টারে করে এসে নামার পর খেলা শুরু হচ্ছে 

Continue reading সা’দী গাদ্দাফীর বর্তমান ও ভবিষ্যত

লিবিয়ার রাজনীতিতে ২০১৮ সালে কী ঘটবে?


আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে কয়েকটা হাফ অনুবাদ টাইপ লেখা দিয়েছিলাম Roar বাংলাতে, কিন্তু নতুন বছরে লিবিয়ার রাজনীতিতে কী ঘটবে, সেটা নিয়ে লেখা হয়নি। লিবিয়ার ব্যাপারটা আসলে ভীষণ জটিল। ক্রমাগত অ্যালায়েন্স শিফটিংয়ের কারণে লিবিয়া, ইয়েমেন এবং সিরিয়ার রাজনীতি খুবই আনপ্রেডিক্ট্যাবল। তাই কী ঘটবে বলার আগে সাম্প্রতিক সময়ে কী ঘটছে, সেদিকটা একটু দেখি।

যেটা আশা করিনি, লিবিয়া নির্বাচনের দিকে হাঁটছে। তবে আশাবাদী হওয়ার খুব বেশি কারণ নাই। নির্বাচন তখনই ফলপ্রসু হয়, যখন একটা অনিশ্চয়তা থাকে – লড়াইটা প্রায় সমান সমান হয়। কিন্তু যদি নির্বাচনের আগেই বলে দেওয়া যায় কারা জিতবে, এবং ল্যান্ডস্লাইডে জিতবে, তাহলে সেই নির্বাচন শেষ পর্যন্ত বানচাল হয়ে যাওয়ার অথবা ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লিবিয়াতে সম্ভবত সেটাই হতে যাচ্ছে।

Continue reading লিবিয়ার রাজনীতিতে ২০১৮ সালে কী ঘটবে?

কাজলা দিদির প্যারডি


খেজুর গাছের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ,
মা গো আমার ঘুম আসে না, ঘুমের ওষুধ কই?

ত্রিপলী আর বেনগাজীতে
ধুড়ুম-ধাড়ুম বোমবাজিতে,
বারুদের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই।
মা গো আমার হাতের কাছে ঘুমের ওষুধ কই?

গুলির খোসায় ছেয়ে গেছে এয়ারপোর্টের রোড,
দেশের ভেতর করছে বিরাজ ইমার্জেন্সী মোড।
বিল্ডিংগুলোর ফাঁকে ফাঁকে,
স্নাইপারেরা লুকিয়ে থাকে।
মেরেই হঠাত বসতে পারে পেয়ে গোপন কোড,
সাবধানেতে থাকিস মাগো, এড়িয়ে চলিস রোড।

খেজুর গাছের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ,
মা গো আমার ঘুম আসে না, ঘুমের ওষুধ কই?
মাথার উপর সারাটি দিন,
উড়ছে বিমান বিরতিহীন,
ড্রোনের শব্দে ঘুম আসে না, তাই তো জেগে রই।
এমন সময় মা গো আমার ঘুমের ওষুধ কই?

প্রথম লেখা: ১৭ আগস্ট, ২০১৪, ফেসবুকে, সে সময় ত্রিপলীর এয়ারপোর্ট রোডে এবং বেনগাজীতে তুমুল যুদ্ধ চলছিল।

লিবিয়ার বিজ্ঞানসম্মত যুদ্ধ


লিবিয়ার যুদ্ধ সম্ভবত খুবই বিজ্ঞানসম্মত যুদ্ধ। এই যুদ্ধ একেবারে নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র মেনে চলে – প্রত্যেক বাহিনীরই একটা সমান ও বিপরীত বাহিনী আছে 

২০১১ সালে সিরতে গাদ্দাফী বাহিনী খুবই শক্তিশালী ছিল। তাই তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য শুধু মিসরাতা থেকেই ছয় হাজার যোদ্ধা সিরতে গিয়েছিল। আর বেনগাজীসহ মোট যোদ্ধা ছিল ১৪ হাজার। কিন্তু এবার সিরতে আইএস এর সদস্য সংখ্যা প্রকাশ্যে খুবই কম। সর্বোচ্চ ২০০ হবে। আর আশ্চর্যজনকভাবে তাদেরকে দমন করার জন্য আসা মিসরাতীদের সংখ্যাও কম। সিরতের পশ্চিমে সব মিলিয়ে ৪০-৫০টা গাড়ি দেখলাম সিরত থেকে বের হওয়ার সময়।

Continue reading লিবিয়ার বিজ্ঞানসম্মত যুদ্ধ