লিবিয়াতে ইসরায়েলি আইএস নেতা?

এই নিউজটা অনেকেই শেয়ার করছে। এই লিবিয়ান আইএস নেতা নাকি আসলে ইসরায়েলের এজেন্ট! তার নাম আবু হাফস ওরফে এফ্রাইম বেনইয়ামিন। সে নাকি লিবিয়াতে ২০০ আইএস যোদ্ধার নেতৃত্ব দিচ্ছিল, বেনগাজীর এক মসজিদের ইমাম হিসেবে ছদ্মবেশে দায়িত্ব পালন করছিল, এবং পরবর্তীতে লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা খেয়েছে। সুতরাং আইএস যে ইসরায়েলের সৃষ্টি, সেটা আবারও প্রমাণিত!

কনভিন্সড? আপনাকে দোষ দেওয়া যায় না, কারণ শতশত সাইট এই নিউজটা শেয়ার দিচ্ছে। এটা যে সম্পূর্ণ ভুয়া প্রপাগান্ডা, সেটার প্রমাণ অলরেডি পেয়ে গেছি, কিন্তু তার আগে চলুন একটু লজিকালি চিন্তা করি, নিউজটা কেন সন্দেহজনক।

denwrdmwsaacte8.jpg

১। নিউজটা শুধু middleeastmonitor, globalresearch সহ এ জাতীয় কন্সপিরেসী থিওরী প্রিয় অনলাইন সাইটেই আসছে। কোনো মানসম্মত সংবাদ মাধ্যমে আসছে না।

২। সংবাদটা লিবিয়ার, কিন্তু কেউ লিবিয়ার কোনো সংবাদ মাধ্যমের লিংক দিচ্ছে না। একটু সার্চ করলে দেখতে পাবেন লিবিয়ার পরস্পরবিরোধী তিন সরকারের চার-পাঁচটা আন্তর্জাতিক মানের নিউজ সাইটের কেউও এ সংবাদটা কভার করেনি। অথচ এরকম একটা সংবাদ সত্য হলে সেই সরকার বিশাল ক্রেডিট নিত, যারা ধরেছে তারা প্রেস ব্রিফিং করত, এবং লিবিয়ার নিয়ম অনুযায়ী মোবাইলে তোলা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যেত।

৩। নিউজের বর্ণনা খুবই দায়সারা – ফেক নিউজগুলো যেমন হয় সাধারণত। লিবিয়ার একাধিক সরকারের একাধিক মিলিশিয়া বাহিনীর মধ্যে ঠিক কারা গ্রেপ্তার করেছে, তাদের নাম নেই। লোকটা কোন মসজিদে ইমামতি করতো, তারও নাম নেই। কোন ব্রিগেডের সদস্য ছিল, সেটারও উল্লেখ নাই। কোনো সরকারী কর্মকর্তার সাক্ষাত্কার নাই। অর্থাৎ আপনি যে ফ্যাক্ট চেক করবেন, সে ব্যবস্থাই রাখা হয়নি 

৪। সবগুলো সাইটে মাত্র এই একটাই ছবি, যেই ছবি দেখে বোঝার উপায় নাই এটা আসলে কোন জায়গায় তোলা। সিকিউরিটি ফোর্সের হাতে গ্রেপ্তার হলে ভিডিও না থাকলেও অন্তত একাধিক ছবি থাকা উচিত ছিল।

এগুলো হচ্ছে লজিকাল ডিডাকশান। কিন্তু যেহেতু ইসরায়েলের ব্যাপার, তাই জানা কথা, আরও ভালো প্রমাণ না পেলে মানুষ বিশ্বাস করবে না। কাজেই ছবিটা একটু গুগল সার্চ করলাম। সবগুলো নিউজে মূল সোর্স হিসেবে ইজরায়েলের Inian Merkazi এবং মিসরের মাসর আল-ইয়াওম পত্রিকার রেফারেন্স দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে Inian Merkazi এর নিউজটা ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে ৩১শে আগস্টে, যেটা থেকেই নিউজটা গত কয়েকদিনে ভাইরাল হয়েছে। আর মাসর আল-ইয়াওমেরটা আরবিতে প্রকাশিত হয়েছিল আরও আগে, জুলাইয়ের ২০ তারিখে।

কিন্তু গুগল সার্চে এই ছবিটার আরও একটা পুরানো ভার্সন পাওয়া গেছে, সেটা হচ্ছে জুলাইয়ের ১৩ তারিখের 🙂 আর ওটা পোস্ট করেছে সিরিয়ার বাশারের পক্ষের একটা টুইটার অ্যাকাউন্ট। তাদের দাবি অনুযায়ী ছবিটা এক আইএস সদস্যের, যে আগে ডাক্তার ছিল, পরে আইএসে যোগ দিয়ে ইরাকের স্লেভ মার্কেট থেকে এক ইয়াজিদি মেয়েকে কিনেছিল। মৌসুল পতনের পর সে জনতার হাতে ধরা পড়েছে। ঐ টুইটে লোকটার এই ছবির পাশাপাশি পুরানো ছবিও দেওয়া হয়েছে।

এটাও যে অথেন্টিক, সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু এই ছবি দ্বারা প্রমাণ হয় লিবিয়াতে ইসরায়েলি এজেন্টের নিউজটা সম্পূর্ণ গুজব। তার অনেক আগে থেকেই ছবিটা ইন্টারনেটে আছে।

বাইদ্যাওয়ে, সবাই মাসর আল-ইয়াওমকে রেফার করলেও তার একদিন আগে, জুলাইয়ের ১৯ তারিখের আরেকটা আর্টিকেল গুগল সার্চে পাওয়া যায়, সেটা ইরানের একটা ওয়েবসাইটের। জ্বী, আইএসের সাথে ইসরায়েলের লিংক প্রমাণের জন্য ইন্টারনেটে যে হাজার হাজার ফেক নিউজ ছড়ানো হয়েছে, এটাও সেরকমই আরেকটা ইরানী প্রপাগান্ডা 🙂

আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি নিজে এই নিউজটা কোট করে লিবিয়ার দুই জনপ্রিয় পত্রিকা লিবিয়া হেরাল্ড এবং লিবিয়া অবজার্ভারকে মেনশন করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই নিউজটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তারা কভার করছে না কেন? উত্তরে লিবিয়া অবজার্ভার জানিয়েে, “বিকজ, ইট’স ফেক নিউজ।” 🙂

স্যরি গাইজ, আইএসের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক এবারও প্রমাণ হলো না। বেটার লাক নেক্সট টাইম!

এবার আমারে ইহুদীর দালাল গালি দিয়া যান, সমস্যা নাই, কিন্তু মিডলইস্ট মনিটর আর গ্লোবাল রিসার্চ সহ যেই সাইটগুলো এই নিউজ রিলে করছে, ওদের নামটা মনে রাইখেন। ভবিষ্যতে সত্যমিথ্যা বুঝতে কাজে লাগতে পারে।

2 thoughts on “লিবিয়াতে ইসরায়েলি আইএস নেতা?”

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান