অ্যান্টি অ্যামেরিকান নিউজের পরিমাণ কেন বেশি?

পত্রপত্রিকায় বা ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা দেখা যায় আমেরিকার বিরুদ্ধে। এর একটা কারণ তো পরিষ্কার – আমেরিকা আসলেই বিশ্বের নাম্বার ওয়ান কালপ্রিট। তা না হলে তারা তাদের সুপার পাওয়ার মেইন্টেইন করতে পারত না।

কিন্তু আমেরিকা বিরোধিতার এটাই একমাত্র কারণ না। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, পাবলিক আমেরিকা বিরোধিতা বেশি খায়। সেজন্য দেখা যায় যারা আসলে আমেরিকা বিরোধী না, বা ইনফ্যাক্ট যারা নিজেরাই আমেরিকার পাপেট, তারাও প্রকাশ্যে প্রচন্ড আমেরিকা বিরোধী সাজে এবং পাবলিকের মন জয় করার জন্য অন্যদেরকে আমেরিকাপন্থী, বা যেকোনো অপরাধকে আমেরিকার ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করতে থাকে।

উদাহরণ প্রচুর পাওয়া যাবে। মিসরের উদাহরণটা বিবেচনা করা যায়। মুরসিকে অবৈধভাবে সরিয়ে সিসি ক্ষমতা বসেছিল আমেরিকার নীরব সমর্থন নিয়েই। না, আমেরিকা মেইন প্লেয়ার ছিল না, কিন্তু তারা ক্যু হবে জেনেও কোনো বাধা দেয়নি।

কিন্তু মিসরের সেনা প্রভাবিত মিডিয়া সিসির ক্যুয়ের আগে-পরে পুরো সময়টাতে এমনভাবে ম্যারাথন প্রপাগান্ডা চালিয়েছে, যেন আমেরিকা এবং ইসরায়েল মুসলিম ব্রাদারহুড এবং মুরসির পক্ষে। এখনও পর্যন্ত সিসির সরকার ইসলামপন্থী, গণতন্ত্রপন্থী যত কাউকে আটক করে, তাদের বিরুদ্ধে সেনা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াতে প্রচার চালানো হয় যে, তারা আমেরিকা এবং ইসরায়েলের এজেন্ট হিসেবে মিসরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

লিবিয়ার উদাহরণও বিবেচনা করা যায়। লিবিয়াতে হাফতার ২০১৪ সাল থেকেই ক্যু করে ক্ষমতা দখলের জন্য আমেরিকার সমর্থন আদায় করার জন্য লাগাতার চেষ্টা করে গেছে। হাফতারের ফ্যামিলি শতশত মিলিয়ন ডলারের ইহুদি লবিয়িস্ট নিয়োগ করেছে ট্রাম্প প্রশাসনকে নিজেদের পক্ষে আনার জন্য।

কিন্তু একই সময়ে তাদের মিডিয়াগুলো কন্টিনিউয়াস প্রপাগান্ডা চালিয়ে গেছে যে, তাদের বিপক্ষের ইসলামপন্থী শিবিরই নাকি আমেরিকার পাপেট। লিবিয়ায় নিযুক্ত সাবেক আমেরিকান অ্যাম্বাস্যাডর ডেবোরা জোনসের চার আঙ্গুল বের করে রাখা একটা ছবি ভাইরাল করে তারা দাবি করেছে, ডেবোরা জোনস যে আসলে ব্রাদারহুডের সিক্রেট এজেন্ট, এই রাবা সাইনই তার প্রমাণ।

এই যে যুদ্ধটা চলছে এখন, এখানে হাফতারকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে আমেরিকার মিত্ররা। আমেরিকা অফিশিয়ালি এখনও কোনো পক্ষ নেয়নি, কিন্তু হাফতারের এবং তার প্রধান ব্যাকার আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে তাদের পক্ষে আনার ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত আছে।

কিন্তু একই সময়ে আমেরিকা বিরোধী প্রপাগান্ডাও অব্যাহত আছে। ২০১৬ সালে আইএস বিরোধী যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনারা লিবিয়ানদেরকে সাহায্য করেছিল – এরকম কিছু ভিডিও ছড়িয়ে এখন দাবি করা হচ্ছে, এগুলো নাকি এখনকার ভিডিও। আমেরিকানরা নাকি এখন ত্রিপলীর মিলিশিয়াদের সাথে মিলে হাফতারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।

পাবলিকের আমেরিকা বিরোধী এই মনোভাবের কারণে যে সমস্যাটা হয়, এই টাইপের নিউজই চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। হিটখোর সাইটগুলো সারাদিন এ ধরনের নিউজই প্রকাশ করতে থাকে। এবং রাশিয়া, চীনসহ অন্যদের অপরাধগুলো চাপা পড়ে থাকে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান